আমাদের অভ্যাসগত যে ত্রুটিসমূহ আছে এটাই
প্রধান কারণ মাড়ি ও দাঁত ক্ষয় হওয়ার। দাঁত শিরশির করা আমাদের দাঁত তো
কোথাও ভাঙেনি কোথাও পোকা ও খায়নি গর্তও হয়নি তাহলে তা শিরশির করছে কেন?
দাঁত শিরশির করা থেকে বোঝা যায় সাধারণত দাঁত ও মারির ক্ষয় হয়েছে কিনা।
আমাদের
দাঁতের কিছু লেয়ার আছে এ লেয়ার গুলো যদি ক্ষয় হয়ে যায় তখনই দাঁত
শিরশির করে। আমরা যদি অনেক বেশি শক্ত খাবার খাই অনেক বেশি দাঁতের মধ্যে
ঘর্ষণ তৈরি করি তখনই কিন্তু দাঁতগুলো ক্ষয় হয়ে যায়।
আবার
দেখা যায় আমরা যখন অ্যাসিড জাতীয় খাবার টক জাতীয় খাবার খাওয়ার
অভ্যাসটা অনেক বেশি থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে তাতে যে এনামেল আছে তার নষ্ট
হয়ে যেতে পারে। অনেকেই আছে যারা দাঁত ব্রাশ করার সময় অনেকটা সময় ধরে
দাঁত ব্রাশ করে এবং খুব বেশি জোর দিয়ে শক্ত ব্রেসাল ওয়ালা ব্রাশ ব্যবহার
করে তাদের ক্ষেত্রে দাঁত ক্ষয় ও মাড়ির হওয়ার প্রবণতাটা অনেক বেশি।
দাঁতের মাড়ি ক্ষয় হয় কেন
দাঁতের
মাড়ির ক্ষয় সম্পর্কে জানতে গেলে আগে দাঁতের মাড়ি চিহ্নিত করতে হবে।
দাঁতের গোড়া বা রুট পাট যে অংশ দিয়ে ঢাকা থাকে তাই দাঁতের মাড়ি। আমরা
প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই তা দাঁত এবং দাঁতের মাড়িতে কিছু অংশ আটকে থাকে।
আমরা
যদি ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ না করি বা মুখ পরিষ্কার না করি তাহলে কিন্তু এই
খাদ্য কনা দাঁতের গোড়ায় বা মাড়ির উপরে জমতে থাকে। এটি জমতে জমতে সাদা
চটচটে একটি পদার্থ তৈরি করে এবং যা মারি ও দাঁতে আটকে থাকে।
আর
দিনের পর দিন যদি এই চটচটে আঠালো স্তর তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে এটি
পরবর্তীকালে এটি জমতে জমতে শক্ত আঠালো একটি হলুদ রঙের আস্তরণ তৈরি করে। এই
আস্তরনকে ডাক্তারি ভাষায় ডেন্টাল ক্যালকুলাস আবার চলতি ভাষায় দাঁতের পাথর
বলা হয়।
এই
দাঁতের পাথর দাঁত এবং মাটির সংযোগস্থলে জমতে শুরু করে এবং দাঁতের মাড়িতে
ইনফেকশন তৈরি করে। এর ফলে দাঁতের মাড়ি নিচের দিকে নামতে শুরু করে। মাড়ি
থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। কোন কোন সময় ব্রাশ করতে গেলে বাড়ি থেকে রক্ত আসে।
দাঁতের মাড়ির ক্ষয় মূলত দাঁতের পাথর জমা থেকে শুরু হচ্ছে। ঠিকমতো ব্রাশ
না করার ফলেই আমাদের এই সমস্যাটা সৃষ্টি হচ্ছে।
দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায়
দাঁতের
মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে হলে প্রথমে আপনাদের অবশ্যই দাঁতের মাড়ি ভালোভাবে
পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে দাঁতের মাড়িতে যে পাথর রয়েছে তা পরিষ্কার
করতে হবে। দাঁতের মাড়ির ক্ষয় প্রতিরোধ করতে পারি আমরা নিয়মিত ভালোভাবে
ব্রাশ করে।
কোল্ড
ড্রিং পরিহার করেও আমরা দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে পারি। অতিরিক্ত টক
জাতীয় খাবার না খেয়েও আমরা দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে পারি ঘরে বসেই।
ধূমপান এড়িয়ে চলে ও আমরা দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে পারি।
যদি
আমাদের দাঁতের মাড়ির কয়টা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে এক্ষেত্রে আমরা ঘরোয়া
কিছু পদ্ধতিতে দাঁতের মাড়ির ক্ষয় প্রতিরোধ করতে পারি। যে উপায় আমরা
দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে পারি তা আমি নিজে বর্ণনা করলাম। সঠিক
পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করা বলতে উপর নিয়ে খুব নরম ব্রাশ দিয়ে উপর নিচে
ভালোভাবে ব্রাশ করা এর মাধ্যমে আমরা বাড়িতে বসেই দাঁতের মাড়ির খাওয়ায়
ক্ষয় রোধ করতে পারি।
গাম
মাসাজ বলতে সাধারণত আমাদের দাঁত ব্রাশের পর দাঁতের মাড়ি আঙ্গুল দিয়ে
সামনে চেপে চেপে দেওয়া আবার নিচের মাড়ি উপরের দিকে চেপে চেপে দেওয়া
এটাকে গাম ম্যাসাজ বলে এভাবেও আমরা মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে পারি।
হালকা
গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার কুলি-কুচি করার মাধ্যমেও
আমরা মারির ক্ষয় রোধ করতে পারি ঘরোয়া ভাবেই। আরেকটা প্রক্রিয়া হল আমাদের
রান্নাঘরে থাকা হলুদ এক চামচ পরিমাণ নিয়ে তাতে পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট
তৈরি করে নিয়ে আমরা যে জায়গাটাতে মাড়ি উপরে উঠে গেছে বা যে জায়গাটা
শিরশির করতেছে সেখানে লাগানো এভাবেও আমরা ঘরোয়াভাবে দাঁতের মাড়ির ক্ষয়
করতে পারি।
অ্যালোভেরা
জেল ভালো করে দাঁতের মাড়িতে মেসেজ করেও আমরা দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ
করতে পারি। আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই যদি
শরীরে ঘাটে থাকে তাহলে আমরা বাইরে থাকি যতটাই চেষ্টা করি না কেন তাদের
খাওয়ায় রোধ করার কোন লাভ হবে না। এক্ষেত্রে আমরা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন
সি ও ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেয়ে এর ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে ভেতর থেকে
আমাদের মাড়ির ক্ষয় প্রতিরোধ হবে ঘরোয়াভাবেই।
দাঁতের ক্ষয় রোধে হোমিওপ্যাথি
সুন্দর
দাঁত ও মাড়ি শুধু আমাদের হাসিটাকে সুন্দর করে না এটা আমাদের সুস্থতার
ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে দাঁতের ক্ষয় বা
গর্ত হওয়াকে অনেকেই দাঁতের পোকা বলে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা শত চেষ্টায়
দাঁতের পোকার কোন অস্তিত্ব পায়নি।
তাহলে
সবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে দাঁতের পোকা আসলে কি? সাধারণত চিনি বা মিষ্টি
আমাদের মুখের ভেতরে এক ধরনের জীবাণু সঙ্গে মিশে এসিড তৈরি করে এই এসিড
দাঁতের উপরে যে শক্ত আবরণ অর্থাৎ এনামেল সেটাকে ক্ষয় করে এবং পরে। গতি
সৃষ্টি করে আর এ রোগের নাম ডেন্টাল ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয় বলা
হয়ে থাকে।
এই
দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধের কার্যকরী হোমিওপ্যাথি ওষুধ হলো প্লানটাগো এটি
সাধনে দাঁতের শিরশির ভাব দাঁতের ব্যথা খুব দ্রুত সেরে যায়। নামাজ
ব্যবহারকারীদের জন্য দাঁতের ব্যথা ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তির এটি একটি
কার্যকরী হোমিওপ্যাথি মেডিসন এরপরের কার্যকারী মেডিসিন টি হল ফ্লিওযোট।
এরপর
হলো kriosotum 200 এটি অবশ্যই যে জায়গায় শিরশির করে বা ব্যথা করে শুধু
সে জায়গাতেই লাগাতে হবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন দাঁতের মাড়ি তে
না লাগে। এরপর merc sol ২০০ এই মেডিসিন টি বাড়ির ব্যথা মাড়িতে ঘা মারি
থেকে রক্ত প্রবাহ এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই
মেডিসিন গুলো ব্যবহার করবে অবশ্যই একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ
নেবেন।
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত ক্ষয় হয়
আমাদের
শুধুমাত্র দাঁতের যত্ন নিলেই যে দাঁত সুস্থ থাকবে তা না দাঁতের যত্নের
পাশাপাশি আমাদের খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার। এতে করে
আমাদের দাঁত এবং মাড়ি সুস্থ থাকবে। কারণ ভিটামিন আমাদের দেহের রোগের সাথে
লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখার
ক্ষেত্রে ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিহার্য।এখন জানাবো যে সকল ভিটামিন আমাদের
দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন
এ, আমাদের মুখের ভেতরে লালার প্রবাহকে ঠিক রাখে।সাধারণত সবুজ শাকসবজি,
গাজর, মিষ্টি কুমড়া, আম, মাছের তেল এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ
থাকে। এরপর হলো ভিটামিন বি যে আমাদের দাঁত এবং দাঁতের মাড়ি সুস্থতায়
বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত মুখের ঘা জীভের প্রদাহ রক্ষা করে জীভের ঘা
হতে আমাদেরকে রক্ষা করে ভিটামিন বি।
সবুজ
শাকসবজি, মটর শুঁটি, সিম, দই মাংস এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে।
ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের মাড়ি থেকে রক্ত প্রবাহ হতে পারে। সাধারণত
আমলকি, কমলা, মালটা এসব ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আর এই
ভিটামিন সি আমাদের ডাল এবং মাড়ির সুস্থতায় অনেক কার্যকর।
এরপর
আসি ভিটামিন ডি ভিটামিন ডি আমাদের দাঁত এবং দাঁতের আশেপাশের হারকে মজবুত
করে। সাধারণত সূর্যের আলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
এছাড়া মাছ মাংস দুধ থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
ভিটামিন
কে এটিও আমাদের দাঁত এবং মাড়ির সুস্থতায় কার্যক্রম করে ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন কে সাধারণত রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ভিটামিন কের অভাবে মারি
ফুলে যেতে পারে এবং কি মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। সবুজ শাকসবজি সয়াবিন
মাছ মাংস তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খেয়ে থাকে।
দাঁতের জন্য কোন পেস্ট ভালো
আসলে
আমরা সবাই জিজ্ঞাসা করে থাকি কোন পেস্ট আমাদের দাঁতের জন্য ভালো হবে। সেটা
কিন্তু আমরা অনেকেই ঠিক মত জানিনা। সে ব্যাপারে আজকে আমরা জানাবো কোন
টুথপেস্ট কাদের জন্য ভালো।
মুখ
পরিষ্কার এবং মুখের ব্যাকটেরিয়া কমানোর জন্য টুথপেস্ট কিন্তু
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে টুথপেস্ট এর মধ্যেও রয়েছে বিভিন্নতা
একেকজনের জন্য একেকটি টুথপেস্ট। সাধারণত বয়স ভেদে টুথপেস্টের ভিন্নতা
আসে।
শিশুদের
ক্ষেত্রে এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে জেল টাইপের যে টুথপেস্ট গুলো
আছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন কারণ শিশুরা কুলি করতে পারেনা গিলে ফেলে
টুথপেস্ট। জেল ফরমেট এর টুথপেস্ট গিলে ফেললেও শিশুদের সেরকম কোনো ক্ষতি হবে
না। তবে পাঁচ বছরের অধিক যে বাচ্চারা আছে তাদের জন্য অবশ্যই ফ্লোরাইড
সমৃদ্ধ টুথপেস্ট দিতে হবে। কারণ ক্লোরাইড দাঁতের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া
ধ্বংস করে দাঁতের এনামেলকে শক্ত করে।
আবার
বড়রা যারা দাঁতের সমস্যা নেই তাদের ক্ষেত্রে কোন একটা টুথপেস্ট দীর্ঘদিন
ব্যবহার করা উচিত নয় তারা দুই মাস পরপর টুথপেস্ট বদলায় ব্যবহার করতে
পারেন। অর্থাৎ আপনি যদি একবার
- পেপসুডেন্ট,
- ক্লোজআপ,
- কোলগেট,
- সেনসোডাইন,
- মেডিপ্লাস,
সেনসোডাইন ও মেডিপ্লাস মেডিকেটেড টুথপেস্ট। এই মেডিকেটেড টুথপেস্ট ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
দাঁতের ফিলিং এর খরচ
দাঁতের
ফিলিং এর ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্নতা রয়েছে। তেমনি চেম্বার ও চিকিৎসক
অনুযায়ী এটার খরচের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তবে চলুন আমাদের দেশের দাঁতের
ফিলিং এর খরচ সম্পর্কে জানি । টেম্পোরারি ফিলিং সাধারণত বাচ্চাদের দাঁতে
কিংবা কোন স্থায়ী ফিলিং এর নিচে এই ফিলিংস ব্যবহার হয়ে থাকে এই ফিলিং
চেম্বার ভেদে 300 থেকে 500 টাকার মধ্যেই হয়ে থাকে।
অ্যামালগাম
ফিলিং এ ধরনের ফিলিং পেছনের দাঁতের জন্য খুব জনপ্রিয়তার সঙ্গেই ব্যবহৃত
হয়ে আসছে। উন্নত দেশে এই ফিলিংয়ে নিষেধাজ্ঞার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে
এই ফিলিং এখনো লক্ষ্য করা যায়। এটি বাংলাদেশে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে
করা হয়ে থাকে। গ্লাস লোনোমার ফিলিং এই ফিলিং এর অনেক ভিন্নতা রয়েছে।
যেমন
যেমন কোনোটি দাঁতের গোড়ায় ক্ষয় হয়ে যাওয়া স্থানে ব্যবহার করা হয়।
আবার কোন সময় দাঁতে ক্যাপ পরানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আবার কখনো এটি
দিয়ে পেছনের দাঁতে ফিলিং করানো হয়। আবার কিছু গ্লাস লোনোমার ফিলিং নিজে
নিজেই সেট হয় আবার গ্লাসো লোনোমার লাইটের মেশিনের মাধ্যমে সেট করতে হয়।
তাই প্রকারভেদ অনুযায়ী এই ফিলিং এর খরচও রয়েছে ভিন্নতা। তবুও বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে ১০০০ থেকে ২০০০ এর খরচ সীমাবদ্ধ বললেই চলে।